বরিশাল অফিস :: কয়বার বলছি বিদ্যুৎ অফিসে, খুঁটির তার ঝুলতেছিল… কেউ আসলো না। এখন আমি সন্তানদের মুখে খাবার তুলবো কীভাবে।এ কথাগুলো বলার সময় কাঁপছিল বিলকিস বেগমের কণ্ঠ। চোখের পানি আর শোকে ভেঙে পড়েছেন তিনি। কারণ, গতকাল বিকেলে একটি ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার কেড়ে নিয়েছে তার স্বামী শামিম সর্নামতের প্রাণ।
বুধবার (২৫ জুন) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নের শিয়ালগুনি গ্রামে। নিহত শামিম সর্নামত (৪৫) ছিলেন গ্রামের মৃত ইউনুস সর্নামতের ছেলে এবং পেশায় একজন কৃষক। প্রতিদিনের মতো গরু নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মাঠই হয়ে ওঠে তার জীবনের শেষ গন্তব্য।
স্থানীয়রা জানান, মাঠের ভেতরে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের খুঁটি থেকে ছিঁড়ে পড়ে থাকা একটি লাইভ বৈদ্যুতিক তার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল। স্থানীয়রা একাধিকবার বিষয়টি জানালেও পেয়ারপুর বাজার এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও ছাপ ডিভিশনের কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছিঁড়ে পড়া ওই তারেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শামিম এবং তার প্রিয় গরুটি মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলেই শামিমের মৃত্যু হয়। সাথে থাকা গরুটিও পুড়ে যায়। পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া।
নিহত শামিমের পরিবারে রয়েছে দুইটি সন্তান। একজন স্কুলে পড়ে, অপরজন এখনও মায়ের কোলে। শামিম ছিলেন পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে বিলকিস বেগমের সংসার পড়ে গেছে চরম অনিশ্চয়তায়। এক প্রতিবেশী জানান, শামিম খুবই শান্ত মানুষ ছিল। কারো সাথে ঝামেলা করত না। গরু পালা, চাষাবাদ করেই পরিবার চালাতো। আজ সে নেই, আর কেউ রোজগার করার মতো নেই।
বরিশাল বাকেরগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসের
ডেপুটি জেনারেল অফিসার মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, তারা তাকে জানালেও তিনি বিষয়টি অবহেলা করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জানতেন তারে বিদ্যুৎ আছে, তারপরও ব্যবস্থা নেননি। স্থানীয় মুরব্বি আবদুল লতিফ বলেন,তারে বিদ্যুৎ ছিল না, এই বলে বিদ্যুৎ অফিস আগেও দায়িত্ব এড়িয়েছে। এখন প্রাণ গেছে একজনের। এটা কোনো ছোট ঘটনা না। আগে ব্যবস্থা নিলে আজ শামিম মরতো না।
বরিশাল বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন,নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একটি অপমৃত্যুর মামলা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।