আগামীর বাংলাদেশ ডেস্ক ::::: বিএনপির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াতে বিভিন্ন মহল তৈরি হচ্ছে : তারেক রহমান
কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াতে বিভিন্ন মহল তৈরি হচ্ছে। তাদের প্রপাগান্ডা আমরা মোকাবেলা করব। সে জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
যশোর, ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলার নেতারা পৃথক তিন স্থানে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের বিশাল অংশ মনে করে ভালো কিছু হলে তা হবে বিএনপির নেতৃত্বেই। সেই কারণে আগামী নির্বাচনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বিএনপিরই সবচেয়ে বেশি। মানুষের এই আস্থা ধরে রাখতে হবে।
এই দায়িত্ব দলের সব নেতাকর্মীর। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘সামনের পথ মোটেই মসৃণ নয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, পলাতক স্বৈরাচার অর্থনীতিসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
ফলে দেশ পুনর্গঠনের কাজটি সহজ নয়। কোনো ম্যাজিক দিয়ে এই কাজ হবে না। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের সুদৃঢ় ঐক্যের মাধ্যমে দেশ গড়তে হবে। তবে বড় দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।’
মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে অবদানের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক দল মানুষকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়ে বর্ডার ক্রস করে অন্য জায়গায় চলে যায়।
আবার কোনো কোনো দল স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, তিনি যুদ্ধে নেতৃত্বও দিয়েছেন। আবার নিজে কোদাল হাতে খাল খনন করে উৎপাদন বাড়িয়েছেন। দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। অন্যদিকে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন লড়াই করেছেন। ফলে দেখা যায়, সংকটকালে বিএনপিই দাঁড়িয়েছে। সেই কারণেই অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ পেলে মানুষ বিএনপিকেই ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেয়।’
নির্যাতিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রতিশোধ নিতে চান। আমিও প্রতিশোধ নিতে চাই। ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে। প্রতিশোধ বলতে আমি ৩১ দফার বাস্তবায়নকেই বুঝি।’
যশোরের একটি হোটেল চত্বরে সকালে কর্মশালা উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। বিএনপির জেলা কমিটি, আটটি উপজেলা ও পৌর কমিটি, ১২টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ জন করে নেতা যশোরের কর্মশালায় অংশ নেন।
যশোরের কর্মশালায় দিকনির্দেশনা দেন দলনেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও এবিএম মোশাররফ হোসেন এবং আতিকুর রহমান রুমন, রেহেনা আক্তার রানু, মাহমুদা হাবিবা, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম।
একইভাবে ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলায়ও কর্মশালা হয় এবং বিকেলে তিন জেলার অনুষ্ঠানে একযোগে যুক্ত হন তারেক রহমান।
মূল বক্তব্যের আগে তিন জেলার বেশ কয়েক নেতার প্রশ্নের জবাব দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপির ৪৬৭ জনসহ দেশে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে বিএনপি শহীদদের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক, সেতু প্রভৃতি স্থাপনার নামকরণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের দল করে না বিধায় গত ১৫ বছরে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণের চাকরি হয়নি। বিএনপি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কোটা নয়, মেধার ভিত্তিতেই সব ধরনের নিয়োগ হবে। দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তাদের মিনিমাম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।’
আর্থিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের লুটপাটের কারণে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে। এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে মিস ম্যানেজমেন্ট-বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্র পুনর্গঠন করা খুব কঠিন হবে।’
দেশি শিল্প চালু ও রক্ষা সংক্রান্ত এক প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি দেশজুড়ে ফ্যামিলি কার্ড চালু করব। এই কার্ডের মাধ্যমে শুধু দেশি পণ্যই সরবরাহ করা হবে। আমদানি করা কোনো পণ্য দেওয়া হবে না। ফলে দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে। চিনিকলসহ বন্ধ সব কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
কর্মশালা উদ্বোধনকালে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘মানুষ এখন বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। তাদের প্রত্যাশা, ধর্মীয় বিশ্বাস বা রাজনৈতিক দর্শনের কারণে কাউকে বিভাজিত করা হবে না। সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করেছে চলেছেন তারেক রহমান থেকে শুরু করে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।’
কর্মশালায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, যশোর জেলা কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, নড়াইল জেলা সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, মতিয়ার রহমান ফারাজী, সাবিরা নাজমুল মুন্নিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা।